ফেসবুক বা অনলাইনে হয়রানির শিকার হলে কি করবেন।

ফেসবুক বা অনলাইন মাধ্যমে হয়রানির শিকার হলে কি করবেন ?

অনলাইনে হয়রানি হলে কিভাবে আইনগত প্রতিকার পাবেন ?

অনলাইনে নারী হয়রানির শিকার হলে কি করবেন ?

Dt-14/03/2021.

ফেসবুক ব্যবহারে সমস্যায় পড়লে কি করবেন।


ফেসবুকে অশ্লীল ছবি ও ভিডিও প্রকাশের হুমকি পেলে কি করবেন ?
অনলাইনে হুমকির শিকার হলে আপনার করণীয় কি ? 
সাইবার অপরাধ বা সাইবার ক্রাইমের শিকার হলে আপনার করণীয় কি? এই পোস্টের আলোকে এইসব প্রশ্নের সমাধান খোঁজার চেষ্টা করব। 

বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মধ্যে জনপ্রিয় একটি মাধ্যম হল ফেসবুক। সহজ করে বলতে গেলে, অনলাইনের মাধ্যমে দূরে অবস্থান করেও পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করার সহজ ও জনপ্রিয় একটি মাধ্যম হচ্ছে ফেসবুক।  

মানবসৃষ্ট প্রত্যেক আবিষ্কারের পিছনে মহৎ উদ্দেশ্য থাকে। এটার ভাল-খারাপ নির্ভর করে ব্যবহারকারীর ব্যবহারের উপর। এদেশে এন্ড্রয়েড মোবাইলের প্রসারতার সাথে সাথে বেশ কয়েক বছর যাবৎ ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিনিয়ত কে কোথায় যাচ্ছে, কি করছে, কার কার সাথে চলাফেলা করছে সব কিছুই সাথে সাথে ফেসবুকে শেয়ার করা হচ্ছে।

কিছুদিন যাবৎ দেখা যাচ্ছে অনেকের ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি হ্যাক হচ্ছে। এক জনের ফেসবুক আইডিতে অন্যজন প্রবেশ করে বিশিষ্ট কোন ব্যক্তি/ প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে মানহানিকার ছবি/ ভিডিও/ পোষ্ট/ কমেন্ট করছে। ফলে যার ফেসবুকের আইডি হ্যাক হয়েছে তাকে বিভিন্ন ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে।  

মোবাইল মিসিং হওয়ার পর কিংবা ব্যবহৃত পুরাতন মোবাইল হাত বদল হওয়ার পর একজনের সংরক্ষিত ফেসবুক সহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আইডি পাসওয়ার্ড দিয়ে অন্যজন অবৈধভাবে সেসব আইডি পরিচালনা করায় অনেকে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখিন হচ্ছেন। 

আইডি হ্যাক বা মোবাইল মিসিং হলে তাৎক্ষনিকভাবে নিকটস্থ থানায় যোগাযোগ করে থানা পুলিশের পরামর্শ অনুযায়ী প্রাথমিকভাবে বিষয়টি সম্পর্কে সাধারণ ডায়েরী করতে পারেন। 

অনেকের ব্যক্তিগত এন্ড্রয়েড মোবাইল/ ল্যাপটপ/ পিসি মেরামতের প্রয়োজনে কাস্টমার কেয়ার কিংবা স্থানীয় মেকানিকের কাছে যেতে হচ্ছে। নিরাপত্তার স্বার্থে ব্যক্তিগত ডিভাইস মেরামতের জন্য নিয়ে যাওয়ার পূর্বে ফেসবুক সহ অন্যান্য মাধ্যমগুলির পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে নিতে পারেন।

আবার অনেকে অফিসে কিংবা সাইবার ক্যাফেতে ফেসবুক ব্যবহার করে থাকেন। অনেক সময় নেট কানেকশন চলে যাওয়ায় কিংবা কারেন্ট চলে যাওয়ায় অথবা ভুল বশত ফেসবুক হতে লগআউট না করায় কিংবা নতুন কোন ব্রাউজারে ফেসবুক লগইন করার সময় ভুল বশত সেভ পাসওয়ার্ডে ক্লিক করে থাকেন। 

পরবর্তীতে কেউ সেই ব্রাউজারে প্রবেশ করার সাথে সাথে অনায়াসে পূর্বের ব্যবহৃত ব্যক্তির ফেসবুকে লগইন হয়ে যাচ্ছে (এই সমস্যাটি ফেসবুকের ক্ষেত্রে বেশি হয়)

অফিস কিংবা সাইবার ক্যাফে কিংবা ভিন্ন কোন জায়গায় ফেসবুক লগ আউট না করার ফলে খারাপ কেউ যে আপনার ফেসবুকের প্রোফাইলে প্রবেশ করে আপনার ব্যক্তিগত বা গোপনীয় ছবি বা ভিডিও সেভ করে নিচ্ছে না তার কোন নিশ্চয়তা নেই। 

ফেসবুক ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটা বড় সমস্যা হলো নতুন কোন ডিভাইসে বা ব্রাউজারে ফেসবুক ব্যবহার করার পর তা লগআউট না করলে ঐ ডিভাইসটিতে ফেসবুক লগইন অবস্থায় থেকে যায়। 

তাই নিজের ব্যক্তিগত ডিভাইস ছাড়া অন্য কোথাও ফেসবুক ব্যবহার করতে হলে সাবধানতা অবলম্বন করুন কিংবা ব্যবহারের পর লগআউট না করে থাকলে সাথে সাথে পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে নিন। কোন অবস্থাতেই নিজের পাসওয়ার্ড কারো সাথে শেয়ার করবেন না।  

যেসব ছবি/ভিডিও আপনি ছাড়া অন্য কারো হাতে গেলে আপনার জন্য কিংবা আপনার পরিবারের জন্য ক্ষতিকর/ মানহানিকর হতে পারে সেসব ছবি বা ভিডিও নিজের ডিভাইসে ধারণ বা সংরক্ষণ করবেন না এবং ফেসবুক সহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংরক্ষণ করে রাখবেন না। 

বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে দেখা যায়, খুব আপন মনে করে বা বিশ্বাস করে অথবা বিশেষ কোন অনুরোধে নিজের খোলামেলা ছবি বা ভিডিও ডিভাইস থেকে ডিভাইসে অথবা ফেসবুকে কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রেরণ করা বা শেয়ার করার কারনে পরবর্তীতে অনেককে মানহানি বা লোক লজ্জার সম্মুখিতন হতে হয়েছে।  

ফেসবুকে বন্ধুত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে সচেতন হওয়া অত্যন্ত জরুরী। অধিক লাইক, শেয়ার পাওয়ার আসায় কিংবা নিজেকে জনপ্রিয় করতে যার তার সাথে ফেসবুক বন্ধুত্ব করার পূর্বে সচেতন থাকুন। 

ফেসবুকে ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোন ছবি বা ভিডিও শেয়ার করার পূর্বে ব্যক্তিগত প্রাইভেসি বজায় রাখুন। উত্তেজনা বশত ফেসবুকে নিজের ব্যক্তি নিরাপত্তা, পারিবারিক নিরাপত্তা, সামাজিক ও সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় এমন কোন কিছু শেয়ার করা হতে বিরত থাকুন। পাশাপাশি দেশের সরকার, সার্বভৌমত্ব, সরকারী প্রতিষ্ঠানের মানহানিকর এবং কারো ধর্মীয় চেতনা হানিকর কোন কিছু শেয়ার করা হতে বিরত থাকুন।  

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এতবেশি ফ্রেন্ড দিয়ে কি করবেন ?

একজীবনে এতবেশি মানুষের সাথে দেখা হওয়ার বা সরাসরি যোগাযোগ করার সম্ভাবনা আছে বলে আমার মনে হয় না। 

কারো সাথে ঘনিষ্ট বন্ধুত্ব হওয়ার পর এমনকি উভয়ের মধ্যে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পরও নিজের আপত্তিকর ছবি বা ভিডিও কোন ডিভাইসে ধারণ, সংরক্ষণ করা থেকে বিরত থাকুন। পাশাপাশি আপত্তিকর ছবি বা ভিডিও ডিভাইস থেকে ডিভাইসে শেয়ার অথবা যেকোন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম আপলোড বা শেয়ার করা থেকে বিরত থাকুন। 

আপনার আপনজন দাবী করে যে এই ধরণের ভিডিও বা ছবি তোলার বা প্রেরণের জন্য অনুরোধ করবে সে যেকোন সময় আপনার বড় ধরণের ক্ষতি করতে পারে, যা আপনি কখনো ভুলেও কল্পনা করতে পারবেন না। 

বাস্তবতার আলোকে শারীরিক ও ব্যক্তিগত বিষয় সমূহ ব্যক্তিগত বা গোপন রাখাই বুদ্ধিমান ব্যক্তির কাজ। সামান্য ভুলের কারনে যেকোন সময় সমস্যায় জড়ানোর সম্ভাবনার চাইতে সচেতন থাকাই উত্তম। বর্তমান সময়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সমূহে চোখ রাখলে বুঝতে পারবেন একান্ত আপনজনরাই আপনজনের বেশি ক্ষতি করে থাকে।

এখন আসি বর্তমানে যারা এই ধরণের অপরাধের শিকার হয়েছেন, কোথায় যাবেন, কার কাছে যাবেন তা নিয়ে চিন্তিত, আতঙ্কের মধ্যে আছেন তারা কি করবেন ? 

কিভাবে প্রতিকার পাবেন ?

কোন নারী যদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হুমকি, আইডি হ্যাক, স্পর্শকাতর তথ্য, ছবি, ভিডিও প্রকাশ, সাইবার স্পেসে যৌন হয়রানি ইত্যাদি অপরাধের শিকার হলে ভুক্তভোগী নারী বাংলাদেশ পুলিশের সাইবার ইউনিটে অভিযোগ জানাতে পারবেন। 

ভুক্তভোগী নারীদের সাইবার সুরক্ষা ও আইনগত সহায়তা দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ পুলিশ সদর দপ্তরের এলআইসি শাখার অধীনে পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন (Police Cyber Support for Women) ইউনিট চালু করা হয়েছে। কোন নারী সাইবার অপরাধের শিকার হলে Police Cyber Support for Women নামীয় ফেসবুক পেজে যোগাযোগ করতে পারবেন। Police Cyber Supoort for Women-PCSW নামীয় ফেসবুক পেজে যোগাযোগ করতে এখানে ক্লিক করুন https://m.facebook.com/PCSW.PHQ/

তাছাড়াও, ইমেইল ঠিকানা-cybersupport.women@police.gov.bd তে মেইল করে এবং মোবাইল নং-01320000888 অথবা জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯ নম্বরে ফোন করে অভিযোগ জানাতে পারবেন। বাংলাদেশ পুলিশের এই ইউনিট অভিযোগকারীর পরিচয় গোপন রেখে কাজ করছেন। 

বিশেষ দ্রষ্টব্য- অনেক হ্যাকার এই ধরনের পেইজ হুবহু নকল করে ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে পারে, তাই কোন লিংকে প্রবেশ করার পূর্বে এবং ব্যক্তিগত তথ্য দেওয়ার পূর্বে সচেতন থাকুন।     

উল্লেখ্য যে, কোন ব্যক্তি এই ধরণের অপরাধে অভিযুক্ত হলে বাংলাদেশের প্রচলিত আইন তথা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮, পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১২ সহ অন্যান্য আইনে  কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। 

তাই অপরাধ থেকে দূরে থাকুন, নিজের ও পরিবারের ভবিষ্যতের কথা মাথায় রাখুন। মনে রাখবেন একটি ভুল সারাজীবনের কান্না।   

আসুন নিজে সচেতন হই, অন্যকে সচেতন করি। আবারো অনুরোধ করছি, নিজের আপত্তিকর ছবি বা ভিডিও ধারণ করা থেকে বিরত থাকুন। পূর্বে ধারণ ও সংরক্ষণ করা থাকলেও তা ডিলিট করে দিন। আপনজন চাইলেও এসব শেয়ার করা বা প্রেরণ করা থেকে বিরত থাকুন। 

সুন্দর আগামীর জন্য নিজেকে সংযত রাখুন। এইসব সাধারণ কিন্তু আইনগত বিষয় গুলি নিজের পরিবার, আত্মীয় স্বজনের নিকট শেয়ার করুন। যাতে সবাই সচেতন থাকে। বিপদ থেকে মুক্ত থাকে। 

#আমার লেখাটি ভাল লাগলে শেয়ার করতে অনুরোধ করা হলো।     

ধন্যবাদ।


আরো দেখুন- ফেসবুকে কেমন পোস্ট করা উচিৎ নয়।

নাগরিক পরিচিতি ফরম কেন প্রয়োজন। 

গিফট বক্স বা অনলাইনে প্রতারণার শিকার হলে কি করবেন ? 

Comments

Popular posts from this blog

জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ কি জেনে রাখুন।

দুঃখ সত্যকে প্রজ্ঞার চোখে জানা।