দোষমুক্ত সুখই চির অম্লান অনবদ্য সুখ।

“দোষমুক্ত সুখই চির অম্লান অনবদ্য সুখ”, আলোচনায় ভদন্ত পঞ্ঞাদীপ থের মহোদয়।

দোষমুক্ত সুখই চির অম্লান অনবদ্য সুখ। বৌদ্ধ ধর্মীয় বিষয়।


দোষমুক্ত সুখই চির অম্লান ও অনবদ্য সুখঃ- বুদ্ধ অনাথপিণ্ডিক শ্রেষ্ঠীকে ০৪-প্রকার লৌকিক সুখের কথা বলেছিলেন-

১। অত্থিসুখ- অভাব না থাকা সুখ।
২। ভোগসুখ- পরিভোগের সুখ।
৩। আনণ্যসুখ- ঋণমুক্তসুখ।
৪। অনবদ্যসুখ-দোষমুক্তসুখ।


অত্থি সুখঃ

মানুষ তার কাঙ্খিত আশা সফল হলে যে সুখ উৎপন্ন হয় সেটি "অত্থিসুখ"। এ সুখটা- ব্যবসা, রোজগার, অবস্থা, অভাব না থাকার সুখ। লৌকিক জীবনে কোন কিছুরই অভাব নেই। কায়িক-মানসিক সূখে সুখি হয়। এ সুখকে বুদ্ধ 'অত্থিসুখ' বলেছেন।
এ সুখটা যতক্ষণ অভাব থাকে না ততক্ষণ সুখ হয়। অভাব উপস্থিত হলে এ সুখ আর থাকে না। তাই এ সুখ ধ্রুব সুখ নয় সাময়িক স্বস্তি সুখ।

ভোগ সুখঃ

ব্যবহার্য সুখকে ভোগের সুখ বলে। দামীদামী বাড়ি গাড়ি ইত্যাদি মন যা চাই তা ব্যবহার করে সেটি ভোগসুখ। অসুখ হলে কোন পরিস্থিতির কারণে এ ব্যবহার্য গুলো সহজেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেলে এ ভোগসুখ থাকে না তাই এ সুখও ধ্রুবনিত্য সুখ নয়।

আনণ্য সুখঃ

প্রত্যেক মানুষের কোন না কোন সমস্যা থাকে। কোন সমস্যার কারণে ঋণগ্রস্ত হয়ে গেলে সবসময় মানসিক অশান্তিতে ভোগে। ঋণমুক্ত মানুষের ক্ষেত্রে এ 'আনণ্যসুখ' সুখ উৎপন্ন হয়। ঋণমুক্ত মানুষ নিজের মত করে হাসি-খুশিতে চলা ফেরা বিশ্রাম করতে পারে। তবে এ সুখও ধ্রুবনিত্য সুখ নয়।

অনবদ্য সুখঃ

চির অম্লান দোষমুক্ত সুখ হল এ অনবদ্যসুখ। অনবদ্য বলতে দোষমুক্ত সুখকে বুঝায়। নিজের কায়িক দোষ, বাচনিক দোষ, মানসিক দোষ, যেদিক থেকে দেখে নিক না সে নিজেকে নিজে দোষমুক্ত বলে জানে। এ দোষমুক্ত ব্যক্তির সুখটা অত্থিসুখ, ভোগসুখ, আনণ্যসুখ থেকে উত্তম বলে অনাথপিণ্ডিক শ্রেষ্ঠীকে বুদ্ধ দেশনা করেছিলেন।

যে কোন সময়ে যে কোন মানুষের যে কোন সুখ লাভ করলেও দোষমুক্ত অনবদ্য সুখকে যে কেউ সহজে লাভ করে না। তাই ০৪টি লৌকিক সুখের মধ্যে এটিই সবচেয়ে উত্তম সুখ বলেছিলেন।

তাই ধর্মপ্রিয় সাধুসজ্জনও এ দোষমুক্ত অনবদ্য সুখ লাভের জন্য উত্তম ধর্মাচরণ করে পরম সুখ নির্বানকে প্রত্যক্ষ করার সক্ষম হোক।

চিরন্তন সত্যঃ

চার আর্যসত্য হলোঃ-
১। দুঃখ আছে।
২। দুঃখের কারণ আছে।
৩। দুঃখ নিরোধ আছে।
৪। দুঃখ নিরোধের উপায় আছে।
“চার আর্যসত্য” দেশ-কাল-পাত্র-অবস্থা-অবস্থানে সব সময় Universal truth চিরন্তন সত্য হয়ে থাকে। এজন্যই উৎপন্ন-বিনাশ জগতে এ চার আর্যসত্য সর্বধর্মের উর্ধ্বে থাকে।
এদেশ-ওদেশ সবদেশে চিরন্তন সত্য। অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যত ত্রিকালে চিরন্তন সত্য। রাজা-প্রজা সবার চিরন্তন সত্য। ধনী-গরীব, সৎ-অসৎ সবার চিরন্তন সত্য। ক্ষমতা পদবী সবার জন্য চিরন্তন সত্য। এই জাতি সেই জাতি সব মনুষ্যজাতের Universal truth চিরন্তন সত্য হয়ে থাকে।
চার আর্যসত্য উপলব্ধি জ্ঞানের দ্বারা সকলে সুখি হোক।

ত্রি অন্তরায় কল্প কি?

  • দুব্ভিক্খন্তরকপ্প (দুর্ভিক্ষ অন্তরায় কাল)
  • সত্তন্তরকপ্প (যুদ্ধ, হানাহানি অন্তরায় কাল)
  • রোগন্তরকপ্প (রোগ অন্তরায় কাল)


দুব্ভিক্খন্তরকপ্প- (দুর্ভিক্ষ কাল) লোভের কারণে দুর্ভিক্ষ (খাদ্যাভাব) কষ্টের কাল। আগুনে ক্ষয়ক্ষতি শিকার।


সত্তন্তরকপ্প (যুদ্ধ, হানাহানি কাল) দ্বেষ বা হিংসের কারণে যুদ্ধ হানাহানি কাল। জলপ্লাবনে ক্ষয়ক্ষতি শিকার।


রোগন্তরকপ্প (রোগান্তর কাল) মোহের কারণে নানা রোগ আক্রান্তে ক্ষয়ক্ষতি শিকার। ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি শিকার। 


নিজের মনে পুণ্যের প্রভাব থাকলে তথা লোভ দ্বেষ মোহ স্বাভাবিক থাকলে উক্ত ক্ষয়ক্ষতি অন্তরায় থেকে নিরাপদ থাকতে পারে। পুণ্যকর্মের দ্বারা নিজের অন্তরকে লোভ দ্বেষ মোহ মুক্ত করে রাখা উচিত।


অতিলোভ অন্তরায় ডেকে আনে, অতি রাগ অন্তরায় ডেকে আনে, অতি মোহ নানা রোগ অন্তরায় ডেকে আনে। লোভ দ্বেষ মোহ অস্বাভাবিক হলে বিপদে পরে। নানা বিপত্তি ঘটে।


অতীতে বারাণসী ও কাশী রাজ্য সীমান্তে এক ধর্মপাল নিগম ছিল। সেই নিগমবাসী শতবছর তলে মরে না, শতবছর উর্ধ্বে বেঁচে থাকে।


অন্য নিগমের সাথে এ নিগমবাসী কেন ব্যতিক্রম ? 

এ নিগমীজন সুন্দর মন মানসিক নিয়ে তাঁরা শীল আচরণ করেন, তাই এ শীলগুণের প্রভাবে শতবছর উর্ধ্বে বেঁচে থাকে। বিপত্তি ভয়ভীতি অন্তরায় তাঁদের নিকট আসে না।


নিজের মধ্যে নানা রোগ ভয়ভীতি অন্তরায় উপদ্রব দুর্নিমিত্ত অমঙ্গল না চাইলে, নিজেকে কি করতে হবে? 

কি করা উচিত? 

নিজের অন্তরকে শীল শিক্ষাপদ দিয়ে সুন্দর সজ্জিত করা। লোভ দ্বেষ মোহকে স্বাভাবিক রাখা বা দুর্বল করা। লোভ দ্বেষ মোহ স্বাভাবিক বা দুর্বল থাকলে অন্তরায়ে ক্ষয়ক্ষতি হবার কোন কারণ নাই।

সবার হিত সুখ মঙ্গল হোক।


#সাধু-সাধু-সাধু।

লেখক-
স্বধর্ম দেশক, বিদর্শন আচার্য
ভদন্ত পঞ্ঞাদীপ থের মহোদয়।
রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা।
তারিখ-১০জুন ২০২১ খ্রিঃ।

Comments

Popular posts from this blog

জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ কি জেনে রাখুন।

ফেসবুক বা অনলাইনে হয়রানির শিকার হলে কি করবেন।

দুঃখ সত্যকে প্রজ্ঞার চোখে জানা।