স্বভাব ধর্ম কি।

স্বভাব ধর্ম কি আমি আমার সত্ত্বা আত্মা জীব আলোচনায় ভদন্ত পঞ্ঞাদীপ থের মহোদয়। বৌদ্ধধর্মীয় বিষয়।

স্বভাব ধর্ম কি। বৌদ্ধধর্মীয় বিষয়।



স্কন্ধ তো স্কন্ধ ধর্মই হয়। আমি-আমার-সে-তুমি-পুরুষ-স্ত্রী-সত্ত্বা আত্মা জীব নহে।
স্কন্ধ (সমষ্টি) হল পরমার্থ ধর্ম। এ পরমার্থ ধর্ম নিজের স্বভাবকে দেখিয়ে থাকে। এ স্কন্ধ স্বভাবে যথাভূত জ্ঞান প্রয়োগ হয় না বলে সম্মুতি ব্যবহারিক আকৃতিতে আটকা পরে।
স্কন্ধ স্বভাব ধর্ম তাদের নিজেদের স্বভাবকে সবসময় বহনকারীকে দেখিয়ে থাকে সম্যক স্মৃতি (খেয়াল) করে না বলে দেখে না।
স্কন্ধ দেখিয়ে থাকার স্বভাব ধর্মতাকে শ্রদ্ধা, স্মৃতি, বীর্য, সমাধি, প্রজ্ঞাগুলো সমতা ঠিকঠাক থাকলে স্কন্ধ দেখিয়ে থাকার সেই নাম-রূপের স্বভাব ধর্মগুলোকে সমন্বয় প্রয়োগ জ্ঞানে দেখতে পাই।
স্কন্ধ দেখিয়ে থাকা স্বভাব ধর্মগুলোকে ধর্মের ধর্মতঃ দেখে নেওয়ার কর্মস্থান কাজটা জ্ঞানের কাজ।
স্কন্ধ তার স্বভাব ধর্মকে দেখিয়ে থাকলেও আমি-আমার-সে-তুমি-পুরূষ-স্ত্রী-সত্ত্বা আত্মা জীব ব্যবহারিক আকৃতি অবিদ্যা ঢেকে রাখার কারণে স্বভাব ধর্মকে যথাভূত করে দেখতে পায় না।
নাম-রূপ সংস্কার স্বভাবধর্ম উদয়-ব্যয়কে প্রয়োগ "সন্দিট্ঠিকো, এহিপস্সিকো" জ্ঞানের দ্বারা স্বয়ং জ্ঞাত হলে যথা আয়ুষ্কাল পর্যন্ত সুখে শান্তিতে থেকেই মরণের জন্য বিচলিত হতে হয় না। এ জ্ঞান না থাকলে পরকাল অন্ধকার কূপে লাভ দেওয়ার মত হবে।
রূপস্কন্ধ বিরূপ প্রতিক্রিয়া হলে নামস্কন্ধ অশান্তিতে ভোগে (কায় অশান্তি হলে মন অশান্তিতে ভোগে)। অসুখ হয় বলতে রূপের স্বভাবধর্ম তাদের নিজেদের উদয়ব্যয় অনিত্যকে দেখিয়ে থাকে। স্বভাবধর্মকে দেখিয়ে থাকে বলে না জানার কারণে ব্যথা বেদনার স্বভাবধর্মের ভেতরে আমি আমার সত্ত্বা আত্ম জীব মিথ্যা ধারনা (Wrong concept) জমে। এ ধারনা মিথ্যাদৃষ্টির কারণে কত অজানা দীর্ঘ সংসারে কষ্টের শিকার হয়েছে।
রূপ বিরূপ প্রতিক্রিয়ার কারণে নাম (ব্যথিত মন) কষ্টের শিকার ক্ষণে আমি-আমার-সত্ত্বা-আত্মা-জীব মিথ্যা ধারনাকে ত্যাগ করে "ধর্মের স্বভাব উদয় হয়ে ধর্মের স্বভাব ব্যয় হয়েছে" বলে স্মৃতিপ্রজ্ঞা (সম্প্রজ্ঞান) রত থাকলে প্রতিটি কর্মস্থান বিষয়ের ধর্মস্বভাবকে উদয়ব্যয় দর্শন করতে সক্ষম হবে। এতে উদয়ব্যয় যতবার দর্শন হবে ততবার মনদ্বারে ক্লেশকলুষ প্রবেশ করতে সুযোগ পায় না।
ক্লেশকলুষ- নির্বান পথিকের দুঃখমুক্ত হোক পছন্দ করে না। তাই স্কন্ধের ভেতরে আমি আমার সত্ত্বা আত্মা জীব মিথ্যাধারনা যেন না ঢুকে পরে সতর্ক থাকা । রূপ প্রতিক্রিয়ায় ব্যথা বেদনা হলে সেই ব্যথা বেদনাকে নিয়ে যেন কেউ আমি আমার ব্যথা দাবী না করাটা জ্ঞান উদয়ে সহায়ক।

(ক) সুখ-দুঃখ-উপেক্ষা বেদনাস্কন্ধ উৎপন্ন হলে সেগুলোকে আমি আমার না করা।
(খ) পরিচিতি জানা সংজ্ঞাস্কন্ধ উৎপন্ন হলে সেটিকে নিয়ে আমি আমার জানা বলে দাবী না করা।
(গ) চেতনা (কর্ম) সংস্কারস্কন্ধ উৎপন্ন হলেও চেতনাকে নিয়ে যেখানে সেখানে এ কাজ আমি করছি, আমার করা না কাজ, আমি না থাকলে হয় না বলে কাজেকর্মে কর্তৃত্ব না করা।
(ঘ) বিষয়কে জানা বিজ্ঞাণ উৎপন্ন হলেও সে বিজ্ঞাণ বা মন বা চিত্তকে নিয়ে আমি জানি, আমি বুঝি, যেখানে সেখানে আমার জানা মাস্টরি না করা।
স্কন্ধতো স্কন্ধই হয়। স্বভাব ধর্মের আমি-আমার-সে-তুমি-পুরুষ-স্ত্রী-সত্ত্বা আত্মা জীব বলতে কিছুই নেই। জ্ঞান রাখা উচিত "ধর্মই উদয় হয়, ধর্মই ব্যয় হয়" এমন সম্যকদৃষ্টি জ্ঞান উৎপন্ন হলে আমি আমার সত্ত্বা আত্মা জীব মিথ্যার আসক্তি থাকে না।

সবার হিত সুখ মঙ্গল হোক।

#সাধু-সাধু-সাধু।

লেখক-
স্বধর্ম দেশক, বিদর্শন আচার্য
ভদন্ত পঞ্ঞাদীপ থের মহোদয়।
রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা।
তারিখ-১৫জুন ২০২১ খ্রিঃ।

Comments

Popular posts from this blog

জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ কি জেনে রাখুন।

ফেসবুক বা অনলাইনে হয়রানির শিকার হলে কি করবেন।

দুঃখ সত্যকে প্রজ্ঞার চোখে জানা।