৬২-প্রকার মিথ্যাদৃষ্টি কি।

৬২ প্রকার মিথ্যাদৃষ্টি সম্পর্কে আলোচনা করেছেন স্বধর্ম দেশক বিদর্শন আচার্য ভদন্ত পঞ্ঞাদীপ ভিক্খু মহোদয়। বৌদ্ধধর্মীয় বিষয়।


৬২-প্রকার মিথ্যাদৃষ্টি কি ? ৬২ প্রকার মিথ্যাদৃষ্টি সম্পর্কে আলোচনা করেছেন স্বধর্ম দেশক, বিদর্শন আচার্য ভদন্ত পঞ্ঞাদীপ ভিক্খু মহোদয়। বৌদ্ধধর্মীয় বিষয়।



অতীত জন্ম সম্পর্কিত ১৮-প্রকার মিথ্যাদৃষ্টি। অনাগত জন্ম সম্পর্কিত ৩৯-প্রকার মিথ্যাদৃষ্টি। বর্তমান সম্পর্কিত ৫-প্রকার মিথ্যাদৃষ্টি সহ মোট ৬২-প্রকার মিথ্যাদৃষ্টি।


০৪ (চার) প্রকার শাশ্বত দৃষ্টি-

১। লক্ষাধিক জন্মের আগে জন্ম ক্রমপর্যায়কে দেখার সমর্থ পূর্বনিবাস অনুস্মৃতি অভিজ্ঞাণ প্রাপ্ত সেই নিজের বহুলক্ষাধিক জন্মের আগে তার এই নাম ছিল, এই বংশের জন্ম হয়েছি তার দেহের আত্মার সাথে বসবাসকারী সত্বলোক নিত্য বলে ধারনা করা মিথ্যাদৃষ্টি।

২। সংবর্ত, বিবর্ত ১০ কল্প পৃথিবী ধরে জন্মের ক্রমপর্যায়কে দেখার সমর্থ সেই নিজের বহুলক্ষাধিক জন্মের মধ্যে তার এই নাম ছিল, এই বংশের জন্ম হয়েছি তার দেহের আত্মার সাথে বসবাসকারী সত্বলোক নিত্য বলে ধারনা করা মিথ্যাদৃষ্টি।

৩। ৪০ কল্প পৃথিবী ধরে জন্মের ক্রমপর্যায়কে দেখার সমর্থ সেই নিজের বহুলক্ষাধিক জন্মের মধ্যে তার এই নাম ছিল, এই বংশের জন্ম হয়েছি তার দেহের অাত্মার সাথে বসবাসকারী সত্বলোক নিত্য বলে ধারনা করার মিথ্যাদৃষ্টি।

৪। ধ্যান অভিজ্ঞাণ বিনে কাল্পনিকভাবে সত্বলোক নিত্য বলে ধারনা করা মিথ্যাদৃষ্টি।


০৪ (চার) প্রকার একত্য শাশ্বতদৃষ্টি

৫। কল্পধ্বংসের সময় পুণ্যবান সত্বরা দ্বিতীয় ধ্যানভূমি এবং আরো উপর উপর ধ্যানভূমিতে উৎপন্ন হয় আর পাপীরা অবীচি নরকে পতন হয়। বাদবাকি ভূমিগুলো কল্পধ্বংস হলে ধ্বংস হয়ে যায়।

পুনরায় নতুন কল্প উৎপন্ন হওয়ার সময় হলে সত্বশূন্য এক ব্রহ্মাবিমান উৎপন্ন হয়। কর্মক্ষয়ে হোক, আয়ুক্ষয়ে হোক, অভস্সর ভূমি থেকে এক ব্রহ্মা সেই ব্রহ্মাবিমানে এসে সর্বপ্রথম মহাব্রহ্মা হয়।

তারপর সেই মহাব্রহ্মা- অন্য ব্রহ্মারাও এসে উৎপন্ন হলে ভাল হয় এ ইচ্ছা করলে অভস্সর ব্রহ্মালোক থেকে কর্মক্ষয়ে হোক, আয়ুক্ষয়ে হোক অন্য ব্রহ্মারাও এসে উৎপন্ন হয়।

এ ব্রহ্মাবিমানে উৎপন্ন ব্রহ্মারা ব্রহ্মলোক থেকে চ্যুত হয়ে মর্ত্যলোকে এসে তারা পূর্বে ব্রহ্মাবিমানের উৎপন্ন টুকুই জানতে পারে তারচেয়ে না জানার কারনে তারা আমরা ব্রহ্মলোকে উৎপন্ন কালে সেই মহাব্রহ্মাই আদি ব্রহ্মা।

অদ্যাবধি ব্রহ্মালোকে তিনি মহাব্রহ্মা হয়ে রয়েছে। আমরা তো এখন মর্ত্যলোকে এসেছি। তাই মহাব্রহ্মা কায়ে আত্মার সাথে সত্বলোক নিত্য, আমরাই অনিত্য বলে ধারনা করা মিথ্যাদৃষ্টি।

এভাবেই ব্রহ্মবিমানে আদি উৎপন্ন মহাব্রহ্মা তিনি ভাবেন যে অন্যান্য ব্রহ্মারাও এসে উৎপন্ন হলে ভাল হয় এরুপ ইচ্ছা করলে কর্মক্ষয়, আয়ুক্ষয়ী ব্রহ্মারা এসে উৎপন্ন হয়।

এজন্যই আমি সৃষ্টিকর্তা ভগবান। আর আমিই এখনো পর্যন্ত এই ব্রহ্মবিমানে অধিষ্ঠিত। পরবর্তী উৎপন্ন ব্রহ্মারা ব্রহ্মালোকে আর নেই। তাই আমিই সৃষ্টিকর্তা। আমিই নিত্য। অন্যরা অনিত্য। কেউ নিত্য। কেউ অনিত্য বলে ধারনা করে। কর্মফল প্রদান সম্পর্কিত যথাসত্য জ্ঞাণ না থাকার কারনে দীর্ঘায়ুকে নিত্য,অল্পায়ুকে অনিত্য বলে ধারনা করা মিথ্যাদৃষ্টি।

৬। আহার করতে ভুলে যাওয়া প্রমোদ প্রিয় দেবতারা আহার সময়ে আহার না করার কারনে দেবলোক থেকে চ্যুত হয়ে পূর্বে দিব্যভবকে মনে করে দেবলোকে রয়ে যাওয়ার দেবসত্বরা নিত্য। আমরা অনিত্য বলে চ্যুত হয়েছি। কারো নিত্য কারো অনিত্য বলে ধারনা করা মিথ্যাদৃষ্টি।

[আমোদ প্রমোদে প্রমত্ত, সময় মতে দিব্যাহার না করলে দেবলোক থেকে চ্যুত হয় এরুপ না জানা দেবতারা; সময় মতে দিব্যাহার করা দেবতাদেরকে চ্যুত হয় না বলে তারা নিত্য, আর আমরাই অনিত্য বলে ধারনা করা মিথ্যাদৃষ্টি]।

৭। ক্রুদ্ধ হয়ে চ্যুত হবার দেবতারা মর্ত্যে উৎপন্ন হলে পূর্বে দিব্যভবকে পুন সমর্থ চোখে দেখতে পেয়ে, আমরা চ্যুত হয়েছি তাই অনিত্য। ক্রোধ না করার দেবতারা ক্রোধ করেনা তাই নিত্য। কেউ নিত্য কেউ অনিত্য বলে ধারনা করার মিথ্যাদৃষ্টি। [ ক্রুদ্ধ হয়ে দেবলোক থেকে চ্যুত দেবতাকে, ক্রোধ না করার চ্যুত না হবার দেবতার সাথে তুলনামূলক নিত্যানিত্য মিথ্যাদৃষ্টি ]।

৮। নিজের কল্পনা মত করে- চক্ষু, কর্ণাদি রূপ তো ধ্বংস হয় বলে অনিত্য। রূপ মারা গেলেও চিত্তটা মরে না। পরিবর্তনও হয় না তাই নিত্য। রূপ ধর্ম নিত্য নয় বলে ধারনা করা মিথ্যাদৃষ্টি।


০৪ (চার) প্রকার অন্তানন্ত দৃষ্টি-

৯। কোন কোন লোকিক ধ্যান লাভী নিজে প্রাপ্ত ধ্যানে একাগ্র হয়ে এ লোকভূমি অন্ত আছে। বিচরণ করে আসতে পারে এমন যাত্রা আছে বলে ধারনা করা মিথ্যাদৃষ্টি।

১০। কোন কোন লোকিক ধ্যান লাভী নিজে প্রাপ্ত ধ্যানে একাগ্র হয়ে লোকভূমি অন্ত নেই, পরিচ্ছেদও নেই বলে ধারনা করা মিথ্যাদৃষ্টি।

১১। কোন লোকিক ধ্যান লাভী প্রাপ্ত ধ্যানে রত থেকে লোকজগত উর্ধ্ব এবং অধ অন্ত আছে তার চতুর্দিকটা অন্ত নেই তাই লোকজগত অন্ত আছে, অন্ত নাই বলে ধারনা করা মিথ্যাদৃষ্টি।

১২। কেউ কেউ নিজে নিজে ভাবে যে লোকজগত অন্ত আছে, অন্ত নাই মনে না করে আসলে লোকজগতটা অন্তও নয়, অনন্তও নয় বলে ধারনা করার মিথ্যাদৃষ্টি। [ উক্ত ৩টি দৃষ্টিকে বর্জন করা মিথ্যাদৃষ্টি ]


অমরাবিক্ষেপ দৃষ্টি-

১৩। কেউ পাপের বিষয় জিজ্ঞেস করলে ত্রুটি হবার ভয়ে এই মতবাদ সেই মতবাদকে আমি গ্রহণ করি না। এই সেই কোন মতবাদ গ্রহণ না করার বিক্ষিপ্ত ধারনা মিথ্যাদৃষ্টি।

(১৪) পাপপুণ্যকে যথার্থ না জেনে উত্তর দিলে পছন্দ, আসক্ত, ক্রোধ, অসন্তুষ্ট ইত্যাদি হলে অন্তরায় হলে আমার অন্তরায় হবে বলে এই মতবাদকেও গ্রহণ করি না, সেই মতবাদকেও গ্রহণ করিনা। এই সেই কোনটাই গ্রহণ না করা অন্তারায় ভীতি বিক্ষিপ্ত মিথ্যাদৃষ্টি।

(১৫) পাপপুণ্যকে যথার্থ না জেনে উত্তর দিলে নিজের উত্তরকে প্রজ্ঞাবান ব্যক্তি বিচার বিশ্লেষণ করলে অন্তরায় হতে পারে বলে এই মতবাদও গ্রহণ করি না, সেই মতবাদও গ্রহণ করি না। এই সেই কোনটাই গ্রহণ না করার মিথ্যাদৃষ্টি।

[নিজের মতবাদকে প্রজ্ঞাবান ব্যক্তির নিন্দার ভয় বিক্ষিপ্ত মিথ্যাদৃষ্টি]।

(১৬) নিজের কোন জ্ঞাণই থাকায় কেউ পরকাল আছে কি জিজ্ঞেস করলে পরকাল আছে বললে সেটি সঠিক উত্তর দেয়। তবে আমি এ মতবাদ গ্রহণ করি না। সেই মতবাদও গ্রহণ করি না। এই সেই কোনটা গ্রহণ না করার বিক্ষিপ্ত মিথ্যাদৃষ্টি।


০২ (দুই) প্রকার অধিত্যসমুপ্পন্নদৃষ্টি-

১৭। চিত্ত বিহীন অসংজ্ঞাসত্ব ব্রহ্মা সংজ্ঞাপ্রতিসন্ধি চিত্ত উৎপন্ন হবার কারনে অসংজ্ঞা ব্রহ্মলোক থেকে মর্ত্যলোকে এসে ধ্যানানুশীলন করে একাগ্রতা লাভ করার ফলে অসংজ্ঞা ব্রহ্মালোক থেকে চ্যুতক্ষণে উৎপন্ন প্রতিসন্ধি সংজ্ঞা উৎপন্নকে স্মরণ করতে সক্ষম তারচেয়ে অধিক জন্মের কথা স্মরণ করতে অক্ষম। এভাবে তার আত্মা ও সত্বলোক অকারনেই হয়েছে। আমি পূর্বেও ছিলাম না বর্তমানই উৎপন্ন হয়েছে। সেজন্যে আত্মা সত্বজগত অকারনে উৎপন্ন বলে ধারনা করা মিথ্যাদৃষ্টি।

১৮। অনেকেই নিজের কল্পনা মত করে আত্মা ও সত্বজগত অকারনে উৎপন্ন হয় বলে মিথ্যা ধারনা করে।


৪৪- প্রকার অপরন্তানুদৃষ্টি

উদ্রমাঘাতনিত সংজ্ঞাবাদ (মরণের পর সংজ্ঞা দৃষ্টি ১৬-প্রকার)।

১৯। জীবের আত্মা বিজ্ঞাণ পরিবর্তন আছে। মারা গেলেও ধ্বংস হয় না। সংজ্ঞা থাকে বলে মিথ্যা ধারনা করে।

২০। জীবের আত্মা পরিবর্তন নাই। মারা গেলেও ধ্বংস হয় না। সংজ্ঞা থাকে বলে মিথ্যা ধারনা করে।

২১। জীবের আত্মা পরিবর্তনও হয় না, অপরিবর্তনও হয় না, মারা গেলেও ধ্বংস হয় না। সংজ্ঞা থাকে বলে মিথ্যা ধারনা করে।

২২। জীবের আত্মা পরিবর্তনও নয়, অপরিবর্তনও নয়, মারা গেলেও ধ্বংস হয় না, সংজ্ঞা থাকে বলে মিথ্যা ধারনা করে।

২৩। জীবের আত্মা অন্ত আছে, মারা গেলেও ধ্বংস হয় না, সংজ্ঞা থাকে বলে ধারনা করা মিথ্যাদৃষ্টি।

২৪। জীবের আত্মা অন্ত নাই,মারা গেলেও ধ্বংস হয় না, সংজ্ঞা থাকে বলে ধারনা করা মিথ্যাদৃষ্টি।

২৫। জীবের আত্মা অন্ত থাকতেও পারে, না থাকতেও পারে। মারা গেলেও ধ্বংস হয় না, সংজ্ঞা থাকে বলে ধারনা করা মিথ্যাদৃষ্টি।

২৬। জীবের আত্মা অন্তও না। অনন্তও না। মারা গেলেও ধ্বংস হয় না, সংজ্ঞা থাকে বলে ধারনা করা মিথ্যাদৃষ্টি।

২৭। জীবের আত্মা কেবল একটি সংজ্ঞাই থাকে। মারা গেলেও ধ্বংস হয় না, সংজ্ঞা থাকে বলে ধারনা করা মিথ্যাদৃষ্টি।

২৮। জীবের আত্মায় নানা সংজ্ঞা থাকে। মারা গেলেও ধ্বংস হয় না, সংজ্ঞা থাকে বলে ধারনা করা মিথ্যাদৃষ্টি।

২৯। জীবের আত্মা অতিক্ষুদ্র কসিন আলম্বনে উৎপন্ন সংজ্ঞা থাকে। মারা গেলেও ধ্বংস হয় না, সংজ্ঞা থাকে বলে ধারনা করা মিথ্যাদৃষ্টি।

৩০। জীবের আত্মা বড়াকার থাকা কসিন আলম্বনে উৎপন্ন সংজ্ঞা থাকে। মারা গেলেও ধ্বংস হয় না, সংজ্ঞা থাকে বলে ধারনা করা মিথ্যাদৃষ্টি।

৩১। জীবের আত্মায় যথাসুখ থাকে। মারা গেলেও ধ্বংস হয় না, সংজ্ঞা থাকে বলে ধারনা করা মিথ্যাদৃষ্টি।

৩২। জীবের আত্মায় দুঃখ থাকে। মারা গেলেও ধ্বংস হয় না, সংজ্ঞা থাকে বলে ধারনা করা মিথ্যাদৃষ্টি।

৩৩। জীবের আত্মায় সুখ-দুঃখ থাকে। মারা গেলেও ধ্বংস হয় না, সংজ্ঞা থাকে বলে ধারনা করা মিথ্যাদৃষ্টি।

৩৪। জীবের আত্মায় সুখ-দুঃখ নাই। মারা গেলেও ধ্বংস হয় না, সংজ্ঞা থাকে বলে ধারনা করা মিথ্যাদৃষ্টি।


উর্দ্ধমাঘাত অসংজ্ঞাবাদ ( মারা যাওয়ার পর সংজ্ঞা অস্বীকার দৃষ্টি ৮-প্রকার)

৩৫। জীবের আত্মা পরিবর্তন হয়। মারা যাওয়ার পর ধ্বংস হয় না। সংজ্ঞা থাকে না বলে ধারনা করা মিথ্যাদৃষ্টি।

৩৬। জীবের আত্মা পরিবর্তন হয় না। মারা যাওয়ার পর ধ্বংস হয় না। সংজ্ঞা থাকে না বলে ধারনা করা মিথ্যাদৃষ্টি।

৩৭। জীবের আত্মা পরিবর্তনও হয়। অপরিবর্তনও হয়। মারা গেলে ধ্বংস হয় না। সংজ্ঞা থাকে না বলে ধারনা করা মিথ্যাদৃষ্টি।

৩৮। জীবের আত্মা পরিবর্তনও হয় না। অপরিবর্তনও হয় না। মারা গেলে ধ্বংস হয় না। সংজ্ঞা থাকে না বলে ধারনা করা মিথ্যাদৃষ্টি।

৩৯। জীবের আত্মা অন্ত আছে। মারা গেলে ধ্বংস হয় না। সংজ্ঞা থাকে না বলে ধারনা করা মিথ্যাদৃষ্টি।

৪০। জীবের আত্মা অন্ত নাই। মারা গেলে ধ্বংস হয় না। সংজ্ঞা থাকে না বলে ধারনা করা মিথ্যাদৃষ্টি।

৪১। জীবের আত্মা অন্তও ঠিক, অনন্তও ঠিক। মারা গেলে ধ্বংস হয় না। সংজ্ঞা থাকে না বলে ধারনা করা মিথ্যাদৃষ্টি।

৪২। জীবের আত্মা অন্তও ঠিক না, অনন্তও ঠিক না। মারা গেলে ধ্বংস হয় না। সংজ্ঞা থাকে না বলে ধারনা করা মিথ্যাদৃষ্টি।


উর্দ্ধমাঘাতনিত নৈবসংজ্ঞানাসংজ্ঞাবাদ (মৃত্যুর পর সংজ্ঞাও নয়,অসংজ্ঞা নয় এমন ৮-প্রকার দৃষ্টি)।

৪৩। জীবের আত্মা পরিবর্তন হয়। মারা গেলে ধ্বংস হয় না। অসংজ্ঞাও না, সংজ্ঞাও না বলে ধারনা করা মিথ্যাদৃষ্টি।

৪৪। জীবের আত্মা পরিবর্তন হয় না। মারা গেলে ধ্বংস হয় না। অসংজ্ঞাও না, সংজ্ঞাও না বলে ধারনা করা মিথ্যাদৃষ্টি।

৪৫। জীবের আত্মা পরিবর্তনও ঠিক,অপরিবর্তনও ঠিক। মারা গেলে ধ্বংস হয় না। অসংজ্ঞাও না, সংজ্ঞাও না বলে ধারনা করা মিথ্যাদৃষ্টি।

৪৬। জীবের আত্মা পরিবর্তনও নয়, অপরিবর্তনও নয়। মারা গেলে ধ্বংস হয় না। অসংজ্ঞাও না, সংজ্ঞাও না বলে ধারনা করা মিথ্যাদৃষ্টি।

৪৭। জীবের আত্মা অন্ত আছে। মারা গেলে ধ্বংস হয় না। অসংজ্ঞাও না, সংজ্ঞাও না বলে ধারনা করা মিথ্যাদৃষ্টি।

৪৮। জীবের আত্মা অন্ত নাই। মারা গেলে ধ্বংস হয় না। অসংজ্ঞাও না, সংজ্ঞাও না বলে ধারনা করা মিথ্যাদৃষ্টি।

৪৯। জীবের আত্মা অন্তও আছে, অনন্তও আছে। মারা গেলে ধ্বংস হয় না। অসংজ্ঞাও না, সংজ্ঞাও না বলে ধারনা করা মিথ্যাদৃষ্টি।

৫০। জীবের আত্মা অন্তও নাই, অনন্তও নাই। মারা গেলে ধ্বংস হয় না। অসংজ্ঞাও না, সংজ্ঞাও না বলে ধারনা করা মিথ্যাদৃষ্টি।

৫১। কেউ এ দেহের আত্মা মাটি, জল, তেজ, বায়ু এ চার মহাভূত সমষ্টিগত মাতাপিতার জন্মজাত। তাই এ দেহের আত্মা ভেঙে হয়ে গেলে আর কিচ্ছু থাকে না ধারনা করা মিথ্যাদৃষ্টি।

৫২। উপরোক্ত দৃষ্টিগত মানুষকে কোন একজন মনুষ্য লোকের আত্মাটা সম্পূর্ণরুপে ছিন্ন হয় না। দেবীদের দিব্যাহারের রূপ আছে অন্য আত্মাও আছে। সেই আত্মা দেহ ভেঙে গেলেই সম্পূর্ণ ছিন্ন হয়ে যায়।

৫৩। উপরোক্ত দৃষ্টিগত মানুষকে কোন একজন মানুষ থেকে দেব দেবীদের আত্মা সম্পূর্ণভাবে ছিন্ন হয় না। রুপ ব্রহ্মলোকে ধ্যান চিত্তের কারনে ছোট বড় অঙ্গপূর্ণ অন্য আত্মাও রয়েছে। অন্য আত্মাও রয়েছে। সেই আত্মা দেহ ভেঙে গেলেই সম্পূর্ণ ছিন্ন হয়ে যায়।

৫৪। উপরোক্ত দৃষ্টিগত মানুষকে অন্য কোন একজন মানুষ থেকে রূপ ব্রহ্মার আত্মা সম্পূর্ণ ছিন্ন হয় না। আকাসানঞ্চাযতন ব্রহ্মলোকে অন্য আত্মাও রয়েছে। সেই আত্মা দেহ ভেঙে গেলেই সম্পূর্ণভাবে ছিন্ন হয় বলে ধারনা করা মিথ্যাদৃষ্টি।

৫৫। উপরোক্ত দৃষ্টিযুক্ত মানুষকে অন্য কোন একজন মানুষ থেকে আকাসানঞ্চাযতন ব্রহ্মলোক থেকে আত্মাও সম্পূর্ণভাবে ছিন্ন হয় না। বিজ্ঞাণঞ্চাযতন ব্রহ্মলোকের অন্য আত্মাও রয়েছে। সেই আত্মা দেহ ভেঙে গেলেই সম্পূর্ণভাবে ছিন্ন হয় বলে ধারনা করা মিথ্যাদৃষ্টি।

৫৬। উপরোক্ত দৃষ্টিযুক্ত মানুষকে অন্য কোন একজন মানুষ থেকে বিজ্ঞাণঞ্চাযতন ব্রহ্মলোকে আত্মা সম্পূর্ণভাবে ছিন্ন হয় না। অকিঞ্চাযতন ব্রহ্মলোকে অনৌ আত্মাও রয়েছে। সেই আত্মা দেহ ভেঙে গেলেই সম্পূর্ণভাবে ছিন্ন হয় বলে ধারনা করা মিথ্যাদৃষ্টি।

৫৭। উপরোক্ত দৃষ্টিযুক্ত মানুষকে অন্য কোন একজন মানুষ থেকে আকিঞ্চাযতন থেকে আত্মাও সম্পূর্ণভাবে ছিন্ন হয় না। নৈবসংজ্ঞানাসজ্ঞাযতন ব্রহ্মলোকে অন্য ব্রহ্মারাও রয়েছে। সেই আত্মা দেহ ভেঙে গেলেই সম্পূর্ণভাবে ছিন্ন হয় বলে ধারনা করা মিথ্যাদৃষ্টি।


দৃষ্টধর্ম নির্বানবাদ (চক্ষু দেখা নির্বানবাদ ৫-প্রকার )-

৫৮। পঞ্চকাম পরিপূর্ণ সুখের আত্মাটা প্রত্যক্ষ নির্বান বলে ধারনা করা মিথ্যাদৃষ্টি।

৫৯। উপরে দৃষ্টিযুক্ত মানুষকে অন্য কোন একজন মানুষ থেকে পঞ্চকাম সুখ ক্ষতিকর দুঃখপূর্ণ থাকায় শোকপরিতাপ হওয়ার কারনে যথাসত্য সুখ নয়। বিতর্ক বিচার সহগত নীবরণ থেকে মুক্ত রুপ প্রথম ধ্যান সুখ আত্মাই প্রত্যক্ষ নির্বান বলে ধারনা করা মিথ্যাদৃষ্টি।

৬০। উপরে দৃষ্টিযুক্ত মানুষকে অন্য কোন একজন মানুষ থেকে রুপ প্রথম ধ্যানে তপ্ত বিতর্ক বিচার থাকায় তা যথাসত্য সুখ নয়। বিতর্ক বিচার মুক্ত দ্বিতীয় ধ্যান সুখ আত্মাই প্রত্যক্ষ নির্বান বলে ধারনা করা মিথ্যাদৃষ্টি।

৬১। উপরে দৃষ্টিযুক্ত মানুষকে অন্য কোন একজন মানুষ থেকে দ্বিতীয় ধ্যান তপ্ত প্রীতি চিত্ত থাকায় যথাসত্য সুখ নয়। প্রীতিকে অতিক্রম করে কায়িক সুখ চৈতসিক সূখপূর্ণ তৃতীয় ধ্যানসুখ আত্মাই প্রত্যক্ষ নির্বান বলে ধারনা করা মিথ্যাদৃষ্টি।

৬২। উপরে দৃষ্টিযুক্ত মানুষকে অন্য কোন একজন মানুষ থেকে দুঃখজনক সুখ থাকায় যথাসত্য সুখ নয়। সুখ দুঃখ মুক্ত পরিশুদ্ধ শূন্যাকাশ চতুর্থ ধ্যানসুখ আত্মাই প্রত্যক্ষ নির্বান বলে ধারনা করা মিথ্যাদৃষ্টি।

[ দীর্ঘনিকায় ব্রহ্মজাল সুত্র ]।

৬২-প্রকার মিথ্যাদৃষ্টিটা সৎকায়দৃষ্টি'র মূল কারন এবং এ মিথ্যাদৃষ্টিই পূর্বগামী। এই সৎকায়দৃষ্টি মুক্ত হলে অন্যান্য দৃষ্টিও সমূলে ছিন্ন হয়। স্রোতাপত্তি মার্গ দ্বারা এ সৎকায় অনুশয় ক্লেশগুলোকে ছিন্ন হলে অপায় গতি বন্ধ হয়।

সবার মিথ্যাদৃষ্টি মুক্ত হয়ে সম্যকদৃষ্টি জ্ঞাণচক্ষু উদয়ের হেতু হোক।

 

স্বধর্ম দেশক, বিদর্শন সাধক,

বিদর্শন আচার্য ও লেখক-

ভদন্ত পঞ্ঞাদীপ ভিক্খু মহোদয়

রাঙ্গামাটি।

সময়-০৭:২৪ ঘটিকা।

তারিখ-৩০ এপ্রিল ২০২১ খ্র্রিঃ।

Comments

Popular posts from this blog

জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ কি জেনে রাখুন।

ফেসবুক বা অনলাইনে হয়রানির শিকার হলে কি করবেন।

দুঃখ সত্যকে প্রজ্ঞার চোখে জানা।