নাগরিক পরিচিতি ফরম কেন প্রয়োজন।

নাগরিক পরিচিতি ফরম কেন প্রয়োজন ? এটি কিভাবে পূরণ করবেন, কোথায় জমা দিবেন, কেন দিবেন ? citizen information management system.


নাগরিক পরিচিতি ফরম এর প্রয়োজন কি, কিভাবে পূরণ করবেন, কোথায় জমা দিবেন, কেন জমা দিবেন ?


citizen information management system. আজকে আমি ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত একটি জরুরী বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। এই বিষয়টি সম্পর্কে অনেকে জানেন আবার অনেকে জেনেও তেমন একটা গুরুত্ব দেন না। তাই আমি এখন বাংলাদেশ পুলিশের একটি পরিকল্পিত বাস্তবসম্মত উদ্যোগ “নাগরিক পরিচিতি ফরম” এর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। 


নাগরিক পরিচিতি ফরমকে অনেকে বাড়িওয়ালা ও ভাড়া‌টিয়া নিবন্ধন ফরম বলে। বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়াদের নিরাপত্তা তথা থানা এলাকার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় বাংলাদেশ পুলিশ নাগরিক পরিচিতি ফরমের মাধ্যমে প্রত্যেক থানা এলাকায় স্থায়ী ও অস্থায়ীভাবে বসবাসরত নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ করে বাংলাদেশ পুলিশের নির্ধারিত ডাটাবেজে সংরক্ষণ করে থাকেন।


ইতোমধ্যে অনেক নাগরিক বাংলাদেশ পুলিশের এই কার্যক্রমকে সাদরে গ্রহণ করলেও অনেকে এই ফরম সঠিকভাবে পূরণ করে নিকটস্থ থানায় জমা দিতে তেমন প্রয়োজন মনে করে না। আবার অনেকে ফরম জমা দিলেও পূর্ণাঙ্গ তথ্য দিয়ে ফরম পূরণ করে জমা প্রদান করে না।


বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়া উভয়ের ক্ষেত্রে এই ফরম পুরণের মাধ্যমে বিভিন্ন ঝামেলা মুক্ত থাকা সম্ভব। এই ফরমে উল্লেখিত তথ্যাদি পুলিশের নির্ধারিত ডাটাবেজে সংরক্ষিত থাকায় অনেক অপরাধী অপরাধ মূলক কাজ করা থেকে বিরত থাকে।


থানা এলাকায় বসবাসরত সকল স্থায়ী-অস্থায়ী নাগরিক এই নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে থানা পুলিশকে সহায়তা করা প্রয়োজন। 


 

এই ফরম কিভাবে সংগ্রহ ও জমা প্রদান করবেন ?-


  • বাংলাদেশ পুলিশ কর্তৃক নির্ধারিত ফরমটি থানা এলাকার বিট পুলিশ অফিসারের মাধ্যমে কিংবা নিজ উদ্যোগে থানা হতে বিনামূল্যে সংগ্রহ করতে পারবেন।
  • ফরম পাওয়ার পর ছবি, নাম-ঠিকানা, এন.আই.ডি নম্বর, মোবাইল নম্বর সহ ফরমে থাকা সকল তথ্যাদি যথাযথভাবে পূরণ করে বিট অফিসার কিংবা সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দিবেন।

  • ফরমটি জমা দেওয়ার পূর্বে ফরমের ফটোকপি বাড়িওয়ালা ও ফরম পূরণকারী সংরক্ষণ করে রাখবেন। 


 

নাগরিক পরিচিতি ফরমের মাধ্যমে বাড়িওয়ালার সুবিধা সমূহ কি কি ?


  • কোন অপরাধী আপনার বাড়িতে ভাড়াটিয়া হয়ে অবস্থান করতে চাইবে না।
  • বাড়িওয়ালা তার ভাড়াটিয়ার নিকট হতে ফরমটি পুরণ করে পুলিশের নিকট যথাসময়ে উপস্থাপন করলে ভাড়াটিয়ার অপরাধে বাড়িওয়ালা ঝামেলা মুক্ত থাকবেন।
  • কোন অপরাধী সকল তথ্য লিখিতভাবে পুলিশের নিকট জমা দিয়ে অপরাধ করতে সাহসবোধ করবে না।
  • কোন অপরাধী এক এলাকা থেকে অপরাধ করে অন্য এলাকায় আত্মগোপনে থাকতে পারবে না।
  • বাড়িওয়ালার সাথে থানার নির্ধারিত বিট অফিসার কিংবা নিকটস্থ থানায় যোগাযোগ থাকায় যে কোন আইনগত বিষয় দ্রুত সহায়তা পাওয়া সম্ভব।
  • আপনার বাসা-বাড়ির গৃহপরিচারিকা, দারোয়ান ও ড্রাইভার নিয়োগ করার সময় এই ফরমে নাম, ঠিকানা সংগ্রহ থাকায় পরবর্তীতে বিভিন্ন ঝামেলা এড়ানো সম্ভব।

 

নাগরিক পরিচিতি ফরমের মাধ্যমে ভাড়াটিয়ার সুবিধাসমূহ কি কি ?


  • বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়ারা একই বাড়িতে সুন্দর পরিবেশে বসবাস করতে পারবেন।
  • বাড়িওয়ালার নিকট ও থানায় নাম, ঠিকানা সংগ্রহে থাকায় কোন ভাড়াটিয়া অন্য ভাড়াটিয়া কিংবা বাড়িওয়ালার সাথে অপরাধজনক কোন কাজ করে বেশি দিন পালিয়ে থাকতে পারবে না।
  • ভাড়াটিয়ার সাথে থানার নির্ধারিত বিট অফিসার কিংবা নিকটস্থ থানায় যোগাযোগ থাকায় যে কোন আইনগত বিষয় দ্রুত সহায়তা পাওয়া সম্ভব।
  • আপনার বাসার গৃহপরিচারিকা, দারোয়ান ও ড্রাইভার নিয়োগ করার সময় এই ফরমে নাম, ঠিকানা সংগ্রহ থাকায় পরবর্তীতে বিভিন্ন ঝামেলা এড়ানো সম্ভব।

 

আপনার সুবিধার্থে নাগরিক পরিচিতি ফরম পূরণের নমূনা দেয়া হলো-


নাগরিক পরিচিতি ফরম, bit policing



ব্যক্তি নিরাপত্তায় দৈনন্দিন কিছু সতর্কতা মেনে চলা প্রয়োজন-


  • পুলিশ কর্তৃক সরবরাহকৃত নাগরিক পরিচিতি ফরম যথাযথভাবে পূরণ করে আপনার এলাকার বিট অফিসারকে অথবা নিকটস্থ থানায় জমা দিন।

  • বাসা-বাড়িতে গৃহপরিচারিকা, দারোয়ান ও ড্রাইভার নিয়োগ করার পূর্বে কিংবা ব্যক্তি মালিকানাধীন ছোটখাট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কাউকে রাখার পূর্বে নাম, ঠিকানা যাচাই করুন এবং নাগরিক পরিচিতি ফরম পূরণ করে থানায় জমা দিন। ফরমের ফটোকপি নিজেও সংগ্রহে রাখুন।

  • মাদক, জুয়া, ইভটিজিং ও সকল প্রকার অসামাজিক কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।

  • মনের মধ্যে রাগ, ক্ষোভ ও হিংসা পুষে রাখবেন না। যেকোন সমস্যার বিষয় আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করুন। 

  • পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় করুন। পরিবারকে সময় দিন।

  • স্বামী-স্ত্রী উভয়ে একে অন্যকে প্রতিপক্ষ না ভেবে পারষ্পরিক শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস অটুট রাখুন।

  • সন্তানকে শাসন করার পাশাপাশি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখুন।

  • আপনার স্কুল/কলেজ পড়ুয়া সন্তানের ফেইসবুক একাউন্ট কিংবা অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একাউন্ট থাকলে তা বন্ধুত্বপূর্ণ নজরদারীতে রাখুন।

  • গুজবে কান দিবেন না কিংবা লোভে পড়ে প্রতারণার স্বীকার হবে না। আপনার যেকোন বিশ্বাসকে পূজি করে স্বার্থান্বেষী যাতে আপনাকে ব্যবহার করতে না পারে সেই দিকে সচেতন থাকুন।  

  • দৈনন্দিন ঘটে যাওয়া বিভিন্ন বিষয়গুলি জানতে জাতীয় ও প্রতিষ্ঠিত গণমাধ্যমগুলির সহায়তা গ্রহণ করুন।

  • সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাওয়া বিভিন্ন সংবাদের সত্যতা নিজের বিবেক দিয়ে যাচাই করুন।

  • বর্তমান সময়ে কাউকে অন্ধ বিশ্বাস করবেন না। কারণ যেকোন সময় আপনার অতি বিশ্বাসী লোকটি আপনার অকল্পনীয় ক্ষতির কারণ হতে পারে।

  • ফেসবুক কিংবা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে পরিচয় পরবর্তী দামী উপহার পাঠানোর নামে অনেকে প্রতারিত হচ্ছেন। লোভ সংযত রাখুন। বিদেশী বন্ধু কিংবা অনলাইন বন্ধু এত দানবীর হয়নি যে অনলাইন পরিচয়ের ভিত্তিতে আপনাকে লক্ষ লক্ষ টাকা মূল্যের দামী উপহার পাঠাবে।

  • আপনার বা অন্যের জরুরী প্রয়োজনে (পুলিশী সেবা, ফায়ার সার্ভিস অথবা এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের জন্য) বাংলাদেশ পুলিশের জাতীয় জরুরী সেবা নম্বর-৯৯৯ এ কল করুন।

 

 

আপনার সুবিধার্থে নাগরিক পরিচিতি ফরমের নমূনা  ছবি .jpg ও .pdf কপি দেয়া হলো।


নাগরিক পরিচিতি ফরম

 


#পোষ্টটি ভাল লাগলে শেয়ার করে অন্যকে দেখার সুযোগ করে দিন।  

ধন্যবাদ।




Comments

Popular posts from this blog

জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ কি জেনে রাখুন।

ফেসবুক বা অনলাইনে হয়রানির শিকার হলে কি করবেন।

দুঃখ সত্যকে প্রজ্ঞার চোখে জানা।