অনলাইনে কাজ করার আগে কি কি জানা দরকার-২০২১।

অনলাইনে কাজ করার আগে কি কি জেনে রাখা প্রয়োজন ?

Date-05/08/2021.

অনলাইনে কাজ করার আগে যা জানা দরকার।


অনলাইনে কাজ করার আগে যেসব বিষয়ে সচেতন থাকা প্রয়োজন এই পোস্টে সেসব বিষয় পর্যায়ক্রমে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করা হয়েছে। 

এন্ড্রয়েড মোবাইলের সহজলভ্যতার কারণে বর্তমান সময়ে ইউটিউব ও গুগল ব্রাউজ করে না এমন ব্যক্তির সংখ্যা খুবই নগণ্য। ইউটিউব ও গুগলের কল্যাণে অনলাইনে কাজ করে সহজে টাকা আয় করার অনেক ভিডিও ও কন্টেন্ট দেখা যায়। এসব ভিডিও ও কন্টেন্ট দেখে যে কেউ অনলাইনে টাকা আয় করার জন্য সহজেই আগ্রহী হয়ে পড়েন। 

তার কারণ অনলাইনে সহজে আয় করার বিভিন্ন লোভনীয় কলাকৌশলের ভিডিও ও কন্টেন্ট দেখে অনেকে মনে করে অনলাইনে কাজ করে কিছুদিনের মধ্যে অনেক টাকা আয় করা অত্যন্ত সহজ। কিন্তু দেখা যায়, নতুন অবস্থায় অনলাইনে কাজ করার যন্ত্রপাতি (Device) (এন্ড্রয়েড মোবাইল, ল্যাপটপ/পিসি ও অন্যান্য ডিভাইস) জোগার করতে যেই টাকা খরচ হয়েছে সেই টাকা তুলতেই হিমসিম খেতে হয়। 

একসময় ধৈর্য্য হারিয়ে অনেকে কাজই ছেড়ে দেয়। আবার অনেকে আইনগত বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে না জেনে ভিডিও ও কন্টেন্ট পাবলিশ করায় বিভিন্ন আইনী জঠিলতায় জড়িয়ে যায়। তাই নতুনদের জন্য অনলাইনে কাজ করার পূর্বে কিছু বিষয় জেনে নেয়া অত্যন্ত প্রয়োজন বলে আমার মনে হয়। 

বর্তমান সময়ে অনলাইনে আয় করার জনপ্রিয় দুটি মাধ্যম হল ব্লগিং ওয়েবসাইটে কনটেন্ট লিখে প্রচার করা এবং ইউটিউবে ভিডিও তৈরী করে আপলোড দেয়া। আবার অনেকে ফ্রিল্যান্সিং করেও আয় করে, যাইহোক আপাতত সেদিকে যাচ্ছি না। 

আপনি যদি ইউটিউব বা ব্লগিং-এ ক্যারিয়ার শুরুর চিন্তা ভাবনা করে থাকেন পোস্টটি আপনার জন্য। 


নতুন নতুন ব্লগে লেখা শুরু করেছি কিভাবে সামনে এগিয়ে যাব ?

প্রথমত নিজের মত করে জানা বিষয়ে ভাল মানের অদ্বিতীয় (Unique) লিখা লিখতে হবে। কারো লিখা হুবহু অনুকরণ বা নকল করে নয়, নিজের যোগ্যতায় লিখার চেষ্টা করতে হবে।  

আমার মতে যিনি নিজের ব্লগে লিখেন তাকে অন্যের ব্লগের কন্টেন্ট পড়া উচিত। তাতে হয় কি, নিজের ব্লগে লিখার সময় কোথায় ভুল হচ্ছে, আরো প্রয়োজনীয় কি কি বিষয় কন্টেন্টে যুক্ত করতে হবে তা বুঝা যায়। 

পাশাপাশি দৈনিক টেলিভিশনের সংবাদ দেখা, দৈনিক সংবাদপত্র পড়াসহ প্রতিনিয়ত ঘটে যাওয়া বিভিন্ন বিষয়ে সাধারণ জ্ঞান রাখার চেষ্টা করা উচিত।

তাছাড়া বর্তমানে বাংলা কোরা (quora.com) বাংলা ভাষাভাষীদের জন্য একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় প্রশ্ন-উত্তরের মাধ্যম। এখানে অনেক উত্তর প্রত্যাশী ব্যক্তি বিভিন্ন রকমের প্রশ্ন করেন এবং অনেক প্রাজ্ঞ ব্যক্তি রয়েছে যারা সেই প্রশ্নের যথোপযুক্ত উত্তর দিয়ে উত্তর প্রত্যাশীকে সহায়তা করেন।

তাই ব্লগিং ক্যারিয়ার শুরু করলে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন বিষয় জানতে ও সম্ভব হলে যোগ্যতা অনুযায়ী অন্যের প্রশ্নের উত্তর দিতে বাংলা কোরা (quora.com) তে চোখ রাখা উচিত।   


অনলাইনে কিভাবে টাকা আয় করব ? সেই চিন্তায় অযথা সময় নষ্ট না করে বিভিন্ন বিষয়ে নিজের যোগ্যতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি করা বুদ্ধিমানের কাজ বলে আমি মনে করি। 

নিজের যোগ্যতা ও দক্ষতা থাকলে ইউটিউব ও ব্লগিং ছাড়াও বিভিন্ন কিছু করে টাকা আয় করা সম্ভব। আমার মতে ইউটিউব বা ব্লগিংকে পার্ট টাইম/ ঐচ্ছিক (Optional) পেশা হিসাবে নেয়া উচিত। যার মাধ্যমে ভবিয্যতে টাকা রোজগার হতেও পারে আবার নাও হতে পারে।

যাইহোক, ব্লগিং ওয়েবসাইটটি যদি সাবডোমেইন তথা ব্লগস্পট ডট কম ডোমেইন দিয়ে শুরু করা হয় সেই সাব ডোমেইনকে কাস্টম ডোমেইনে রূপান্তর করুন। এজন্য দেশী হোক বিদেশী হোক ভাল মানের কোম্পানী থেকে কাস্টম ডোমেইন ক্রয় করতে পারেন। আমি বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানী লিমিটেড (BTCL) থেকে ডোমেইন নিয়ে কাজ করছি। আপনিও চাইলে নিতে পারেন।

এরপর একটি পেইড থিম দিয়ে ওয়েবসাইটিকে সাজানোর ব্যবস্থা করুন। এজন্য ইউটিউবে থাকা বিভিন্ন ভাল মানের ব্লগার ওয়েবসাইট কাস্টমাইজেশন ভিডিও দেখতে পারেন।

মোটামুটি ২/৩ মাসে ২৫/৩০ টির মত ভাল কন্টেন্ট লিখার পর ওয়েবসাইটে Contact, AboutPrivacy Policy, Terms & ConditionsDisclaimer পেইজ তৈরী করার পর গুগল এডসেন্স এর আবেদন করতে পারেন। 

আবার অনেকে বলে থাকে ১০/১২টি কন্টেন্ট লিখে অল্প সময়ের মধ্যে গুগল এডসেন্স পেয়েছে কিংবা ব্লগস্পট ডট কম সাব-ডোমেইন দিয়ে আয় করছে। এদের কথা সত্য হতেও পারে, আবার নাও হতে পারে। একটি কথা মনে রাখা উচিৎ, “অনলাইনে পাওয়া সব তথ্য সবসময় সঠিক হয় না।” 

তবে আমি এর বিপক্ষে। কারণ একটি ওয়েবসাইট (ব্লগার হোক বা ওয়াডপ্রেস) তৈরী করার পর এর মেনুবার কাস্টমাইজেশন, কন্টেন্ট অনুযায়ী লেবেল তৈরী, কোন কোন বিষয়ে লিখা যায় তা নির্বাচন বা বাছাই করতে এবং সাইটের বিভিন্ন সেটিং ও সাজগোজ করতে করতে প্রায় ২/৩ মাস সময় এমনিতেই পার হয়ে যায়। 

খুব অল্প সময়ে কম পরিশ্রমে যদি ব্লগিং থেকে টাকা আয় করা যেত কেউ আর কষ্ট করে চাকরি বা ব্যবসা-বাণিজ্য করত না। আমিও আগে অনলাইনে আয়ের বিভিন্ন লোভনীয় ইউটিউব ভিডিও দেখে বিষয়টি খুবই সহজ মনে করতাম কিন্তু বাস্তবতায় দেখছি ভিন্ন রূপ। 

ইউটিউবে শিক্ষণীয় বিষয় ছাড়া অন্যান্য বিষয়ে ভিডিও শেয়ার করার জন্য ভিডিও এডিটিং করতে একটু কষ্ট হয়। কিন্তু ব্লগিং-এ লিখতে তার চাইতে হাজার গুণ কষ্টের। 

কারণ চাইলেই ভাল মানের কন্টেন্ট লিখা যায় না। কোন বিষয়ে লিখতে হলে সেই বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ দখল বা জ্ঞান থাকা চাই এবং সেই বিষয়ে বিভিন্নভাবে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে অনেক তথ্য সংগ্রহ করতে হয়। 

আবার পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান থাকলেও লিখা কোন জায়গা থেকে শুরু করতে হবে কিংবা কিভাবে শেষ করতে হবে এবং লিখাটি পাঠকের মনপুত হচ্ছে কিনা সেটা বের করে একটি কন্টেন্ট লিখতেও সময় লাগে। 

একটি ভাল মানের ইউনিক কন্টেন্ট লিখতে হলে ৪/৫ ঘন্টা কিংবা তারও বেশি সময় লেগে যায়। আর সেটি নিজের মনের মত করে এডিটিং করতে বা লিখার ভুলগুলি সংশোধন করতেও সময় লাগে। 

আমি গড়ে হিসাব করে দেখেছি, একটি ইউনিক কন্টেন্ট লিখে তা ওয়েবসাইটে পাবলিশ করতে প্রায় এক দিন বা দুই দিন সময় লেগে যায়। তার মধ্যে মাঝে মাঝে কন্টেন্টের কিছু কিছু বিষয় আবার আপডেট করতে হয়।


ওয়াডপ্রেস কিংবা ব্লগার (CMS), কোনটি বেশি সুবিধাজনক ?

ওয়াডপ্রেস বা ব্লগার যেটিই হোক উভয়ই হল কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম। ওয়াডপ্রেস বা ব্লগার ছাড়াও আরো অনেক কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম আছে। সাধারণভাবে বলা চলে CMS হল ওয়েবসাইট পরিচালনার একটি মাধ্যম। একটি ওয়েবসাইট তৈরী করার পূর্বে বা পরে অনেকে দ্বিধাদ্বন্দ্বের সম্মুখিন হন, কোন কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (CMS)-এ কাজ করা সহজ ও সময়োপযোগী। 

অর্থাৎ ব্লগারে (Blogger) কাজ করবেন কিনা ওয়াডপ্রেসে (Wordpress)? 

আমি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় বলছি কোনটাই খারাপ নয়। 

ব্লগারে ওয়েবসাইট খোলার পর সাব-ডোমেইনের পরিবর্তে একটি কাস্টম ডোমেইন সেটআপ করতে হয়, গুগলের তরফ থেকে হোস্টিং ফ্রিতে পাওয়া যায়।

আর ওয়াডপ্রেসে ডোমেইন এবং হোস্টিং কিনে ওয়েবসাইট তৈরী করতে হয়। 

মূল কথা হলো নতুনরা যারা ওয়েবসাইট ডেভলাপিং সম্পর্কে সাধারণ দক্ষতা নেই তাদের জন্য ব্লগার ভাল। কারণ ওয়াডপ্রেস নিজে থেকে কোন সুবিধা দেয় না, যা ব্লগারে পাওয়া যায়।

আমিও ব্লগারে ওয়েবসাইট তৈরী করে কয়েক মাস কাজ করার পর আমার ওয়েবসাইটটিকে ব্লগার থেকে ওয়াডপ্রেসে মুভ করেছিলাম। ওয়াডপ্রেসে আমার ওয়েবসাইটটি মুভ করার পর থেকে আমার ওয়েবসাইটে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ইরর আসতে শুরু করে। ওয়াডপ্রেসে আমার ওয়েবসাইটে ইররগত সমস্যার কারনে আমি পুনরায় ব্লগারে ফিরে আসি। 

ওয়াডপ্রেসে ওয়েবসাইটের ডিজাইন অতি সহজে করা যায় এবং সাইটের ডিজাইন খুবই চমৎকার হয়। কিন্তু ওয়াডপ্রেস হল এডভান্স লেভেলের। ওয়াডপ্রেসে কাজ করতে হলে HTML, CSS, JAVASCRIPT, PHP, MYSQL সহ কিছু বিষয়ে দক্ষতা অবশ্যই প্রয়োজন রয়েছে। এসব বিষয় না জানলে ওয়েব ডেভলাপের সহায়তা নিতে হবে। নতুন অবস্থায় ওয়েব ডেভলাপারের পিছনে টাকা খরচ না করে ব্লগারে থাকা ভাল বলে আমি মনে করি।  

অনেকের ক্যামেরার সামনে আসতে সংকোচ/ভয় লাগে এবং সবার সামনে ভাল করে গুছিয়ে কথা বলতে পারে না, তবে কি তাদের দ্বারা ইউটিউবে (Youtube) কাজ সম্ভব ? 

কিংবা 

শিক্ষিত কিন্তু লেখালেখিতে তেমন দক্ষতা নাই ব্লগিং করার ইচ্ছা আছে তারা কি করবেন ?

অনেকের ক্যামেরার সামনে আসতে সংকোচ, ভয় ও লজ্জা লাগে এবং সবার সামনে ভাল করে গুছিয়ে কথা বলতে পারে না। তারা কিভাবে ভিডিও তৈরী করে ইউটিউবে আপলোড দিবে ? সেই প্রশ্ন অনেকের। আমি বলব এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে না বলে কোন শব্দ রাখা যাবে না। হোক সেটা লেখাপড়া, ইউটিউব, ব্লগিং কিংবা চাকরি বা ব্যবসা বাণিজ্য। 

আমি আগেও বলেছি চেষ্টা করতে হবে। অন্য ব্যক্তিরা কিভাবে ইউটিউবে কথা বলছে, কিভাবে ব্লগে কন্টেন্ট লিখছে তা অনুসরণ করতে হবে। ইউটিউব মানে যে শিক্ষণীয় তা নয়। কোন অনুষ্ঠানের ভিডিও (যেসব ভিডিও প্রকাশে কোন বিধিনিষেধ নেই) কিংবা কোথাও ভ্রমণের অভিজ্ঞতার ভিডিও কিংবা রান্না করার অভিজ্ঞতা নিয়ে সহজেই ভিডিও তৈরী করে ইউটিউবে আপলোড করা যায়। প্রথম প্রথম ভিডিও এর গুণগত মান (Quality) ভাল হবে না সেটা স্বাভাবিক। আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে।

মূল কথা হল, কিছু অভিজ্ঞতা নিয়ে আগপিছ না ভেবে শুরু করতে হবে। আজ করব, কাল করব ভেবে ভেবে বসে থাকলে হবে না, শুরু করে দিতে হবে। যেকোনভাবেই হোক শুরু করলেই কাজ শেষ হয়, শুরু না করলে কাজ শেষ হওয়ার প্রশ্নই আসে না। কোন কাজ শুরু করার পর বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হয়। সেসব সমস্যা সমাধান করতে করতে একসময় বিষয়টি সহজ মনে হবে।   

চেষ্টা করলে সব হয়। তবে যে কাজটি করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়, সেই কাজটি শুরু করার পূর্বে কিছু সাধারণ দক্ষতা, যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা অর্জন করার পর চেষ্টা করতে হবে। নইলে মাঝপথে বড়ধরণের সমস্যার সম্মুখিন হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা বিদ্যমান। 

এজন্য ইউটিব বা গুগলে থাকা কিভাবে ইউটিউব শুরু করবেন ? কিভাবে ব্লগিং শুরু করবেন ? এই টাইপের শিক্ষণীয় ভিডিও ও কন্টেন্ট গুলি আগে দেখুন এবং চেষ্টা করুন কোন কোন বিষয়ে আপনার দক্ষতা আছে। পাশাপাশি ইউটিউ বা ব্লগিং শুরু করার পর কি কি সমস্যা সৃষ্টি হয় বা কি কি সমস্যা হতে পারে সেসব বিষয়ে আগেই জেনে নিন। তারপর শুরু করুন।

তবে আমি বলব, ইউটিউব বা ব্লগ ওয়েবসাইট শুরুর জন্য অতিব প্রয়োজন ব্যক্তিগত যোগ্যতা, জ্ঞান ও দক্ষতা।

কোন কোন কাজে কি কি ডিভাইস প্রয়োজন ?

ব্লগার বা ইউটিউবে কাজ করার জন্য অনেকে বলে থাকে মোবাইল দিয়ে সম্ভব। তবে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায়, ইউটিউবে কাজ করতে হলে ভিডিও করার জন্য একটি ভাল মানের এন্ড্রয়েড মোবাইল ফোন, ভিডিও এডিটিং এবং তা ইউটিউবে আপলোড করার জন্য একটি ভাল মানের ল্যাপটপ বা ডেক্সটপ কম্পিউটার প্রয়োজন।

যার সম্ভাব্য কনফিগারেশন হতে পারে যথাক্রমে Random Access Memory (RAM)-At Last 08 GB, Intel Core i5 Processor এর 7th Generation to 9th  Generation, Core i5 Motherboard, সি-ড্রাইভের জন্য-SSD এবং ফাইল সংরক্ষণের জন্য-One Terabyte Hard Drive প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।

ব্লগিং এর জন্যও ইউটিউবের মত ভিডিও এডিটিং এর প্রয়োজন না হলেও পোস্টের সাথে দেয়া ছবি এডিটিং এবং কন্টেন্ট লিখার জন্য একটি মাঝারী কনফিগারেশনের ল্যাপটপ বা ডেক্সটপ কম্পিউটার হলে যথেষ্ট। 

অনেকে মোবাইল দিয়ে চেষ্টা করছে, যা ব্যক্তিগত সুবিধা-অসুবিধার বিষয়। আমার কাছে মোবাইল দিয়ে ইউটিউব বা ব্লগিং এ কাজ করা ঝামেলার বিষয় এবং বেশ সময় সাপেক্ষ ব্যাপার মনে হয়। তাছাড়াও মোবাইল দিয়ে বিভিন্ন এডিটিং এবং সেটিংস এর কাজ করা ততটা সহজ নয়। 

অনেকে বলে থাকে ফ্রিতে ব্লগিং করে টাকা আয় করা যায়। আমি মনে করি ইউটিউব ও ব্লগিং একটি ব্যক্তিগত ব্যবসা। ব্যবসা করতে যেমন মূলধন প্রয়োজন তেমনি ইউটিউব বা ব্লগিং-এ ক্যারিয়ার তৈরী করতে হলেও মূলধন প্রয়োজন। 

ইউটিউব বা ব্লগিং এর প্রাথমিক মূলধন হচ্ছে অনলাইনে কাজের সহায়ক ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস তথা, এন্ড্রয়েড মোবাইল, ল্যাপটপ বা পিসি, ইন্টারনেট সংযোগ ও ইন্টারনেট বিল। 

ব্লগিং করলে ডোমেইন ক্রয় করতে হবে। যদি ব্লগারে কাজ করার ইচ্ছা থাকে। আর যদি ওয়াডপ্রেসে কাজ করতে ইচ্ছা থাকে তবে ডোমেইন ও হোস্টিং উভয় ক্রয় করতে হবে। পাশাপাশি ওয়াডপ্রেসে কাজ করতে হলে HTML, CSS, JAVASCRIPT, PHP, MYSQL সহ আরো অনেক কিছু জানতে হবে বলে আমি মনে করি। 

যদি ওয়াডপ্রেসে ওয়েবসাইট পরিচালনার ইচ্ছা থাকে (Web Development Course) এইসব বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা দরকার। 

অনেকে বলে থাকে এসব কিছুই লাগে না। আমি বলব সফল হতে হলে সেই বিষয় সংশ্লিষ্ট যোগ্যতা ও দক্ষতা অবশ্যই লাগবেই। আজকে শুরু কালকে টাকা এই স্বপ্নই অনেকের ক্ষতির কারণ হয়।

এখন আসি এসবের পিছনে এত টাকা খরচ করার পূর্বে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা অর্জন করা জরুরী কিনা ? 

অবশ্যই জরুরী। বিভিন্ন ডিভাইসের পিছনে ও ডোমেইন হোস্টিং কেনার জন্য টাকা বিনিয়োগ (Invest) করার পূর্বে দক্ষতা অর্জন বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ ইউটিউব কিংবা ব্লগিং যেইটা শুরু করেন না কেন যোগ্যতা ও দক্ষতার বিকল্প কিছু নেই। 

ইউটিউব কিংবা ব্লগিং শুরু করার সাথে সাথে টাকা আয় করা যায় না। অন্যদিকে যদি ভাল মানের কন্টেন্ট না হয় কিংবা ভাল মানের ভিডিও না হয় সেটিও দর্শক বা পাঠক গ্রহণ করবে না। তাই সব কিছু ভেবে চিন্তে কাজে নামা উচিত। 

অনলাইনে অনেক ভিডিও ও কন্টেন্ট পাবেন যেগুলি সাধারণত অস্থায়ী (Temporarily) সাইট তৈরী করার পদ্ধতি দেখিয়ে অনেক সহজে আয় রোজগারের পথ দেখাবে। বাস্তবে যখন কাজ শুরু করবেন তখন বুঝবেন, আসলে আয় করা এত সহজ নয়। তাই ব্যক্তিগত দক্ষতার বিকল্প বলে কিছু নেই। ব্যক্তিগত দক্ষতা অর্জন করুন, নিজের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে ইউটিউব বা ব্লগিং-এ ক্যারিয়ার শুরু করুন। 


এবার আসি অনলাইন/ ডিজিটাল যেকোন মাধ্যমে ভিডিও ও কন্টেন্ট প্রকাশের পূর্বে কোন কোন বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করবেন এবং সচেতন থাকবেন ?

ইউটিউব বা ব্লগিং-এ কাজ করার সময় তথা অনলাইনে ভিডিও ও কন্টেন্ট প্রকাশের সময় কিছু সাধারণ বিধি-নিষেধ মেনে চলা উচিৎ। এইসব বিষয় না মানলে হয়তো হিতের বিপরীত হতে পারে। এসব বিষয়ে আমার কিছু ব্যক্তিগত মতামত তুলে ধরলাম, যা হয়তো আপনার কাজে লাগতে পারে।

  • এমন কনটেন্ট বা ভিডিও প্রচার করা যাবেনা যা অশ্লীল। ভবিষ্যত প্রজন্মের কথা চিন্তা করে অনলাইনে কাজ করার সময় অশ্লীলতা বর্জন করতে হবে। তাই অশ্লীল কোন কনটেন্ট বা ভিডিও প্রকাশ না করা।
  • সার্বভৌম রাষ্ট্র ও সরকারের মানহানিকর বা বিরোধী কোন কনটেন্ট বা ভিডিও প্রকাশ না করা।
  • কারো ধর্মীয় বিশ্বাস এবং ধর্মীয় কোন ব্যক্তিত্বকে নিয়ে উস্কানি মূলক বা  মানহানিকর ও কটূক্তিমূলক কোন কনটেন্ট বা ভিডিও প্রকাশ না করা।
  • কোন ব্যক্তি, পরিবার বা প্রতিষ্ঠানের মানহানিকর কোন কনটেন্ট বা ভিডিও প্রকাশ না করা।
  • সমাজে বিশৃঙ্খলতা সৃষ্টি হয় বা কু-প্রভাব পড়ে এমন কোন কনটেন্ট বা ভিডিও প্রকাশ না করা। 
  • গুজব রটনা মূলক কোন কনটেন্ট বা ভিডিও প্রকাশ না করা।
  • এমন কিছু যা আইনগত ও ধর্মীয়ভাবে বিধিনিষেধ রয়েছে এবং যা প্রকাশ হলে আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ সেসব কনটেন্ট বা ভিডিও প্রকাশ না করা।
  • যৌন হয়রানী মূলক যা ইভটিজিং এর সামিল কোন কন্টেন্ট বা ভিডিও প্রকাশ না করা। 
  • কোন অপরাধে উৎসাহিত করে এমন কোন কনটেন্ট বা ভিডিও প্রকাশ না করা।
  • ভাইরাল হওয়ার জন্য যেনতেন কন্টেন্ট বা ভিডিও প্রকাশ না করা। 


অনলাইনে আয় করা যতটা সহজ মনে করা হয়, বাস্তবে ততটা সহজ নয়। অনলাইন জগতে কাজ করার সময় কোন কোন বিষয় অনলাইনে প্রকাশ করা উচিত নয়, কোন বিষয় প্রকাশ করলে সমাজে বিরূপ প্রতিক্রিয় সৃষ্টি হবে এবং কোন কোন বিষয় প্রকাশ করলে দেশের প্রচলিত আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য হবে সেসব বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে।  

তা না হলে নিজের ব্যক্তিগত ওয়েবসাইটে মনগড়া (যা দৃষ্টিকটু বা বেআইনী) কন্টেন্ট বা ভিডিও প্রকাশ করার কারণে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখিন হওয়ার সম্ভাবনা বিদ্যমান রয়েছে। 

আমি মনে করি, যারা অনলাইনে কাজ করে তাদের নিজ নিজ দেশের প্রচলিত কিছু আইন নিজের প্রয়োজনে একবার হলেও পড়ে নেয়া উচিত, যেমন- ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮; পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রন আইন, ২০১২ এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০। সম্ভব হলে সময় নিয়ে পেনাল কোড, ১৮৬০ পড়ে নেয়ার চেষ্টা করুন। উল্লেখ্য যে, সকল আইন বর্তমানে অনলাইনে (Google-গুগলে সার্চ দিন) বাংলা ও ইংরেজিতে পাওয়া যায়।

অনলাইনে কাজ করতে আমি কাউকে নিরুৎসাহিত (Discouraged) করছি না। জেনে বুঝে কি করবেন বা কি করবেন না সেই সঠিক সিদ্ধান্তটি গ্রহণ করতে সচেতনতা (Awarenessসৃষ্টির জন্য এই পোস্টটি প্রচার করার মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।


#পোস্টটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন।

ধন্যবাদ।  

আরো পড়তে পারেন- কোন প্লাটফর্ম ব্লগিং ক্যারিয়ার শুরুর জন্য ভাল হবে-২০২১।

Comments

Popular posts from this blog

জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ কি জেনে রাখুন।

মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহারে সচেতনতা ও করণীয় কি।

ফেসবুক বা অনলাইনে হয়রানির শিকার হলে কি করবেন।