শুভ আষাঢ়ী পূর্ণিমা-২০২১।
শুভ আষাঢ়ী পূর্ণিমা-২০২১।
সবাইকে শুভ আষাঢ়ী পূর্ণিমার মৈত্রীময় শুভেচ্ছা।
আষাঢ়ী পূর্ণিমা-২০২১
ভৌগলিক অবস্থান ও বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী বাংলাদেশে ছয়টি ঋতু (গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত) বিদ্যমান। সেই অনুযায়ী আষাঢ় ও শ্রাবণ এই দুই মাস বর্ষাকাল। কিন্তু আষাঢ় মাস থেকে কার্তিক মাস পর্যন্ত বৃষ্টির মৌসুম চলমান থাকে।
তবে আষাঢ় মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত এই তিন মাস ঝড়-বৃষ্টির পরিমাণ বেশি দেখা যায়। এই বৃষ্টির মৌসুমে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা বিহারের বাইরে গিয়ে ধর্মদান ও ধর্ম প্রচারে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখিন হন।
সেই হিসাবে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা আষাঢ়ী পূর্ণিমা থেকে আশ্বিনী পূর্ণিমা পর্যন্ত এই তিন মাসব্যাপী নিজ নিজ বিহারে অধিষ্ঠান করে অবস্থান করেন এবং বিহারে থেকে ধর্মাচরণ করে থাকেন।
পাশাপাশি প্রত্যেক অমাবস্যা, অষ্টমী ও পূর্ণিমা তিথিতে বিহারে আগত ধর্মপ্রাণ উপাসক উপাসিকাদের ধর্মদান করেন এবং উপাসক-উপাসিকারা এই অমাবস্যা, অষ্টমী ও পূর্ণিমা তিথিতে উপসথ শীল বা অষ্টশীল গ্রহণ ও পালন করেন।
নানাদি কুষল কর্ম সম্পাদনের মধ্যদিয়ে আষাঢ়ী পূর্ণিমা থেকে বর্ষাবাস শুরু হয় এবং আশ্বিনী পূর্ণিমায় মহাসমারোহে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য বজায় রেখে প্রবারণা পূর্ণিমা পালন করা হয়। প্রবারণা পূর্ণিমার পরদিন থেকে অর্থাৎ কার্তিক মাসে একমাস ব্যাপী প্রত্যেক বিহারে নির্ধারিত একটি দিনে কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠিত হয়।
বৌদ্ধদের নিকট আষাঢ়ী পূর্ণিমা কেন তাৎপর্যময়-
আষাঢ়ী পূর্ণিমা তিথিতে বোধিসত্ত্ব (যিনি গৌতম বুদ্ধ নামে পরিচিত) মায়াদেবীর জঠরে প্রতিসন্ধি গ্রহণ করেন। সিদ্ধার্থ গৌতম ঊনত্রিশ বছর বয়সে নগর ভ্রমণে গিয়ে চার দিনে চারি নিমিত্ত তথা- জরা দুঃখ, ব্যাধি দুঃখ, মৃত্যু দুঃখ এবং গেরুয়া বসনধারী পুলকিত মনের সন্ন্যাসী দর্শন করেন।
চারি নিমিত্ত দর্শন করার পর কিভাবে জরা-ব্যাধি-মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায় সেই চিন্তায় মগ্ন হন। এসব থেকে মুক্তির উপায় বের করার মানসে সন্ন্যাসী হওয়ার উদ্দেশ্যে সিদ্ধার্থ গৌতম এই আষাঢ়ী পূর্ণিমা তিথিতে রাজ প্রাসাদ, সিংহাসন ও সংসারের মায়া ত্যাগ করে গৃহ ত্যাগ করেন।
এরপর সিদ্ধার্থ গৌতম গয়ার বোধিবৃক্ষ মূলে ছয় বছর কঠোর তপস্যা (ধ্যান-Meditation) করে বুদ্ধত্ব লাভ করার পর এই আষাঢ়ী পূর্ণিমা তিথিতে সারনাথে পঞ্চবর্গীয় শিষ্যের নিকট প্রথম “ধর্মচক্র প্রবর্তন সূত্র” দেশনা করেন।
এই আষাঢ়ী পূর্ণিমা তিথিতে মহামতি গৌতম বুদ্ধ শ্রাবস্তীতে যমক ঋদ্ধি প্রদর্শন করেন এবং ভিক্ষুদের জন্য বর্ষাবাসের নিয়মনীতি প্রবর্তন করেন।
আষাঢ়ী পূর্ণিমা তিথিতে মাতৃঋণ শোধ করার জন্য মহামতি গৌতম বুদ্ধ শেষ জন্মের পরলোকগত মাতা মায়াদেবীকে ধর্মদানের জন্য তাবতিংস স্বর্গে গমণ করেন এবং মায়াদেবীকে ধর্মদেশনা দান করেন। এইসব ঘটনাবহ কারনে আষাঢ়ী পূর্ণিমা তিথি বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের নিকট বেশ তাৎপর্যপূর্ণ।
আষাঢ়ী পূর্ণিমা তিথিতে বৌদ্ধধর্মাবলম্বীরা কি কি কুষলাদি সম্পাদন করে থাকেন ?
আষাঢ়ী পূর্ণিমা তিথিতে বৌদ্ধ নরনারী তথা উপাসক-উপাসিকারা সকাল বেলা পরিশুদ্ধ ও শ্রদ্ধাযুক্ত মনে নিকটস্থ বৌদ্ধ বিহারে গমণ করেন এবং পুষ্প পূজা, বুদ্ধ পূজা, প্রদীপ ও সুগন্ধি ধুপকাঠি প্রজ্জ্বলন করার পর বিহার অধ্যক্ষ ভিক্ষুর মাধ্যমে বুদ্ধ প্রতিবিম্বের সম্মুকে সমাবেত প্রার্থনাসহ পঞ্চশীল ও অষ্টশীল গ্রহণ করেন।
এই দিন নিয়মানুযায়ী নির্ধারিত সময়ে আহারাদি গ্রহণ করার পর বিকাল বেলা বিহার প্রাঙ্গনে সমাবেতভাবে ধ্যানানুশীলন করেন। নির্ধারিত সময়ের ধ্যান চর্চা করার পর বিহার অধ্যক্ষ ভিক্ষু সমাবেত উপাসক-উপাসিকাদের নিকট ধর্ম দেশনা করেন।
ধর্ম দেশনার পর সন্ধ্যায় উপাসক-উপাসিকারা বুদ্ধের সম্মুখে প্রদীপ ও সুগন্ধি ধুপকাঠি প্রজ্জ্বলন ও একক প্রার্থনার পর পুনঃরায় বিহারাধ্যক্ষ ভিক্ষুর মাধ্যমে সমাবেত প্রার্থনা করে থাকেন।
এরপর যেসব উপাসক-উপাসিকারা অষ্টশীল তথা উপসথ শীল গ্রহণ করেন তারা নিজ নিজ গৃহে ফিরার পর বৌদ্ধ বিনয়ের সহিত ধর্মাচরণ ও পূঙ্খানুপুঙ্খভাবে গ্রহণকৃত উপসথ শীল রক্ষা করে রাত্রি যাপন করেন। উপসথ শীলধারী উপাসক উপাসিকরা পরদিন সকালে পুনঃরায় বিহারে গিয়ে ভিক্ষুর মাধ্যমে সমাবেতভাবে পঞ্চশীল গ্রহণ করে অষ্টশীল বা উপসথ শীল ত্যাগ করে থাকেন।
এভাবে আষাঢ়ী পূর্ণিমা থেকে আশ্বিনী পূর্ণিমা পর্যন্ত তিন মাস ব্যাপী উপাসক-উপাসিকারা প্রতি অমাবস্যা-অষ্টমী-পূর্ণিমা তিথিতে উপসথ শীল গ্রহণ ও পালন করে থাকেন।
এক কথায় বলা চলে, এই আষাঢ়ী পূর্ণিমা তিথি থেকে আশ্বিনী পূর্ণিমা তিথির মধ্যবর্তী তিন মাস সময়ে বৌদ্ধ ভিক্ষু ও উপাসক-উপাসিকারা দান-শীল-ভাবনা/বিদর্শন (Meditation) অনুশীলনের মাধ্যমে অতিবাহিত করে নির্বাণের পথে ধাবিত হওয়ার চেষ্টায় রত থাকেন এবং পারমী অর্জন করেন। বর্ষাবাস শেষে কঠিন চীবর দানানুষ্ঠান সম্পন্ন করেন।
#পোস্টটি ভাল লাগলে শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করা হল।
ধন্যবাদ।
Comments
Post a Comment